রেক্টাল ক্যান্সারের লক্ষণ

 অধ্যাপক ডা. এস এম এ এরফান : হারুন সাহেব (ছদ্ম নাম) মধ্যবয়সী। একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। অফিসের দায়িত্বপূর্ণ কাজে সব সময় ব্যস্ত থাকতে হয়। বিদেশেও যেতে হয় প্রায়ই। শত ব্যস্ততার মাঝেও স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন। ইদানীং পায়খানার ব্যাপারে একটু সমস্যা হচ্ছে। পায়খানা এখন আর আগের মতো নয়। আগে প্রতিদিন সকালে নিয়মিত কোষ্ঠ পরিষ্কার হতো। এখন তা কখনো সকালে কখনো বিকালে কখনো একাধিকবার হচ্ছে। হারুন সাহেব তেমন পাত্তা দেননি। হয়তো খাওয়া-দাওয়ায় কোন সমস্যা হয়েছে, সেজন্য এরকম সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু সমস্যাটি তার ক্রমান্বয়ে বাড়তে লাগল। শেষে তিনি তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকের কাছে বিষয়টি পুরোপুরি খুলে বলেন। তিনি পেট টিপেটুপে পরীক্ষা করে বললেন সব ঠিক আছে। ‘আপনার মনে হয় খাবারে গন্ডগোল আছে। তবুও আপনার সন্দেহ হলে একজন বিশেষজ্ঞ কোলোরেক্টাল সার্জনের কাছে যান।’ এরপর যাব যাব করেও হারুন সাহেব বেশ কিছুদিন পার করে দেন। তারপর হঠাৎ একদিন তার পায়খানা বন্ধ হয়ে যায়। পেট একটু একটু ফেঁপে যায়। তড়িঘড়ি করে তিনি একজন সার্জনের শরণাপন্ন হন। সার্জন সাহেব তাকে পরীক্ষা করেন এবং পাররেক্টাল অর্থাৎ পায়ুপথের পরীক্ষা করেই তার মুখ কালো হয়ে যায়। কারণ সেখানে একটি টিউমার পায়খানার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। পরীক্ষা করে দেখা গেল সেটি রেক্টাল ক্যান্সার। রেক্টাল ক্যান্সার বর্তমানে বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের মধ্যে যাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তিত হয়ে গেছে। যারা শাকসবজি কম খাচ্ছেন তাদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা হারুন সাহেবের মতো বাড়ছে।

 

প্রথম কথা হচ্ছে, রেক্টাল ও কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ কী? এ ক্যান্সার হওয়ার অনেক দিন পর্যন্ত কোনো লক্ষণ দেখা না-ও দিতে পারে। তারপরও রোগের প্রথমদিকে রোগী খেয়াল করলে যেসব বিষয় বুঝতে পারবেন সেগুলো হচ্ছে- পায়খানার অভ্যাস পরিবর্তিত হওয়া অর্থাৎ আগে যদি দিনে একবার কোষ্ঠ পরিষ্কার হতো, এখন তা কয়েকবার হওয়া। মলের প্রকৃতি পরিবর্তিত হওয়া অর্থাৎ আগে স্বাভাবিক মল হলে এখন তা আগের থেকে কঠিন অথবা নরম হওয়া, কালো পায়খানা হওয়া, সকাল বেলা পাতলা পায়খানা হওয়া, মিউকাস যাওয়া, টয়লেটে যাওয়ার পর মনে হয় পায়খানা রয়ে গেছে আবার হবে ইত্যাদি। আর হতে পারে ওজন কমে যাওয়া, পেট ব্যথা করা ইত্যাদি। তাই এ বিষয়ে অবহেলা আমাদের সচেতন হতে হবে। কারণ প্রতিকার নয়, প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম।

লেখক : কোলোরেক্টাল সার্জন, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী, ঢাকা।

সূূএ:  বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» নির্বাচন হলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে : মোস্তফা ফিরোজ

» সীমান্ত দিয়ে আরও ৪৮ জন পুশইন করয় আটক

» শিবচরে গাড়িচাপায় অজ্ঞাতপরিচয় নারী নিহত

» নূরুলের মুখে রাতের ভোটের ভয়ংকর কাহিনি

» ‘ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট’ কর্মসূচি বাতিল

» জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বিএনপি

» সাবেক এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয় গ্রেফতার

» ‘ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে পরাজিত করেছে ইরান’

» দুপুরের মধ্যে ঢাকাসহ ৯ অঞ্চলে ঝড়ের আভাস

» আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব এলাকা-মার্কেট বন্ধ

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

রেক্টাল ক্যান্সারের লক্ষণ

 অধ্যাপক ডা. এস এম এ এরফান : হারুন সাহেব (ছদ্ম নাম) মধ্যবয়সী। একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। অফিসের দায়িত্বপূর্ণ কাজে সব সময় ব্যস্ত থাকতে হয়। বিদেশেও যেতে হয় প্রায়ই। শত ব্যস্ততার মাঝেও স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন। ইদানীং পায়খানার ব্যাপারে একটু সমস্যা হচ্ছে। পায়খানা এখন আর আগের মতো নয়। আগে প্রতিদিন সকালে নিয়মিত কোষ্ঠ পরিষ্কার হতো। এখন তা কখনো সকালে কখনো বিকালে কখনো একাধিকবার হচ্ছে। হারুন সাহেব তেমন পাত্তা দেননি। হয়তো খাওয়া-দাওয়ায় কোন সমস্যা হয়েছে, সেজন্য এরকম সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু সমস্যাটি তার ক্রমান্বয়ে বাড়তে লাগল। শেষে তিনি তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকের কাছে বিষয়টি পুরোপুরি খুলে বলেন। তিনি পেট টিপেটুপে পরীক্ষা করে বললেন সব ঠিক আছে। ‘আপনার মনে হয় খাবারে গন্ডগোল আছে। তবুও আপনার সন্দেহ হলে একজন বিশেষজ্ঞ কোলোরেক্টাল সার্জনের কাছে যান।’ এরপর যাব যাব করেও হারুন সাহেব বেশ কিছুদিন পার করে দেন। তারপর হঠাৎ একদিন তার পায়খানা বন্ধ হয়ে যায়। পেট একটু একটু ফেঁপে যায়। তড়িঘড়ি করে তিনি একজন সার্জনের শরণাপন্ন হন। সার্জন সাহেব তাকে পরীক্ষা করেন এবং পাররেক্টাল অর্থাৎ পায়ুপথের পরীক্ষা করেই তার মুখ কালো হয়ে যায়। কারণ সেখানে একটি টিউমার পায়খানার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। পরীক্ষা করে দেখা গেল সেটি রেক্টাল ক্যান্সার। রেক্টাল ক্যান্সার বর্তমানে বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের মধ্যে যাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তিত হয়ে গেছে। যারা শাকসবজি কম খাচ্ছেন তাদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা হারুন সাহেবের মতো বাড়ছে।

 

প্রথম কথা হচ্ছে, রেক্টাল ও কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ কী? এ ক্যান্সার হওয়ার অনেক দিন পর্যন্ত কোনো লক্ষণ দেখা না-ও দিতে পারে। তারপরও রোগের প্রথমদিকে রোগী খেয়াল করলে যেসব বিষয় বুঝতে পারবেন সেগুলো হচ্ছে- পায়খানার অভ্যাস পরিবর্তিত হওয়া অর্থাৎ আগে যদি দিনে একবার কোষ্ঠ পরিষ্কার হতো, এখন তা কয়েকবার হওয়া। মলের প্রকৃতি পরিবর্তিত হওয়া অর্থাৎ আগে স্বাভাবিক মল হলে এখন তা আগের থেকে কঠিন অথবা নরম হওয়া, কালো পায়খানা হওয়া, সকাল বেলা পাতলা পায়খানা হওয়া, মিউকাস যাওয়া, টয়লেটে যাওয়ার পর মনে হয় পায়খানা রয়ে গেছে আবার হবে ইত্যাদি। আর হতে পারে ওজন কমে যাওয়া, পেট ব্যথা করা ইত্যাদি। তাই এ বিষয়ে অবহেলা আমাদের সচেতন হতে হবে। কারণ প্রতিকার নয়, প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম।

লেখক : কোলোরেক্টাল সার্জন, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী, ঢাকা।

সূূএ:  বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com